ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বা পটভূমি যদি আমরা ব্যাখ্যা করতে যাই তবে আমাদেরকে বেশকিছু সময় বা ঘটনার দিকে তাকাতে হবে। এই ঘটনাগুলো আমরা যদি প্রকৃতপক্ষে বুঝতে পারি তবে আমরা খুব সহজেই ভাষা আন্দোলনের পটভূমি সম্পর্কে একটি আলোচনা উপস্থাপন করতে পারব।

ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করতে হলে মূলত বেশকিছু ঘটনা উপস্থাপন করতে হবে। এরমধ্যে প্রথমত আমাদেরকে ভাষার উপরে কিভাবে আঘাত আনা হয়েছে সেই সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। তারপরে আঞ্চলিক আন্দোলনের সূচনা ঠিক কীভাবে ঘটেছে সেটা সম্পর্কে বর্ণনা করতে হবে। এরপরে খাজা নাজিমুদ্দিন যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সেটা আমাদেরকে উপস্থাপন করতে হবে। তারপরে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন এবং ছাত্রদলের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণ এবং রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে কিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে আলোচনা করলেই আমরা সঠিকভাবে ভাষা আন্দোলনের পটভূমি উপস্থাপন করতে পারব।

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর

যেহেতু এই প্রশ্নটি স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বিষয় অনেক সময় আসতে দেখা যায় সেহেতু এই প্রশ্নটিকে এই বিষয়ে পরীক্ষার জন্য খুব ভালোভাবে অনুশীলন করা উচিত। এ প্রশ্নটি যদি সঠিকভাবে অনুশীলন করতে পারেন তবে আপনি এ ধরনের আরও বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন। যদি আপনার সাজেশন প্রয়োজন হয়ে থাকে তবে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সাজেশন থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন

ভাষার উপরে আঘাত

১৯৪৭ সালে যখন ভারত এবং পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে বিভক্ত হয় তখন মূলত পূর্ব পাকিস্তান এর উপরে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেতে শুরু করে। আর এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের ভাষাকে কোন ধরনের সম্মান না দেওয়া। পাকিস্তানের বাঙালিরা ছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে উর্দুকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মারাত্মক ভুল করেন। বাঙ্গালীদের ভাষাগত স্বাধীনতা হরণের প্রথম প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকার জনসভায় উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানানোর মাধ্যমে।

আঞ্চলিক আন্দোলনের সূচনা

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যে ভাষণ সেদিন দিয়েছিলেন সেটার মাধ্যমে মূলত বাঙালির মনে ভাষার প্রতি যে ভালোবাসা রয়েছে সেটা আরো তীব্র ভাবে প্রকাশিত হয়। পুরো দেশ জুড়ে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনের সূচনা ঘটে এবং এর মাধ্যমে মূলত বড় ধরনের আন্দোলনের আঁচ পাকিস্তানের বিভিন্ন স্বেচ্ছাচারী পলিটিশিয়ানরা পেয়েছিলেন।

খাজা নাজিমুদ্দিনের ঘোষণা

খাজা নাজিমুদ্দিন যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন তখন এই সমস্যা আরও গভীর হতে থাকে। খাজা নাজিমুদ্দিন শাসনকার্যে অদক্ষ ছিলেন। এবং তিনি শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সৃষ্টি করেছিলেন। ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি তিনি আবারও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু এবং একমাত্র রাষ্ট্রভাষা উর্দুকে ঘোষণা দেন এরপর থেকেই মূলত আন্দোলনের অবস্থায় থাকে চরম হতে থাকে। পূর্ববাংলার জনগণ প্রচন্ড বিস্ফোরণে ফেটে পড়ে। ফলে আন্দোলন চরম আকার ধারণ করতে লাগলো।

রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন

খাজা নাজিমুদ্দিনের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ছাত্র ধর্মঘট পালিত হলো। পরে ভাষা আন্দোলনকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এর সদস্য ছিলেন জনাব আবুল হাশেম, জনাব আতাউর রহমান খান, জনাব কামরুদ্দীন আহমদ ও জনাব তোয়াহা প্রমুখ।

পুলিশের গুলি বর্ষণ

ভাষা আন্দোবনের সাহসী সৈনিক বাংলার সংগ্রাম পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রভাষা দিবসের ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে একই দিন (২১ ফেব্রুয়ারি) ছিল পাকিস্তান সরকারের বাজেট অধিবেশনের দিন। ছাত্রদের কর্মসূচিকে বানচাল করার জন্য সরকার পূর্বেই ১৪৪ ধারা জারি করেন। এ অবস্থায় সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্ররা এক জরুরি বৈঠকে সমবেত হয় এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধার্থ গ্রহণ করে।

২১ ফেব্রুয়ারি সর্বাত্মক হরতাল পালনের মধ্য দিয়ে ছাত্ররা প্রতি ১০ জনের একটি মিছিল বের করে। এ আন্দোলনকে প্রতিহত করার জন্য পুলিশ বাহিনী মাঠে নামে। কলেজ ছাত্র মিছিলের ওপর চলে লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ। কিন্তু দেখা যায় একপর্যায়ে এগুলো কোন কাজ করতে পারছেনা, ফলে পুলিশ মিছিলের ওপর গুলি চালায়। সরকারি হিসাব মতে একুশে ফেব্রুয়ারি ঘটনার দিন ও পরে কমপক্ষে ৬ জন শহীদ হয়েছিলেন। তারা হলেন- রফিকউদ্দিন আহমদ, আবুল বরকত, শফিউর রহমান, আবদুল জব্বার, অহিউল্লাহ ও আবদুস সালাম।

রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি

২১ ফেব্রুয়ারির হত্যা ঘটনায় উত্তাল দেশবাসী প্রতিবাদস্বরূপ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হরতাল পালন করে। এ সময় ব্যাপক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ২২ ফেব্রুয়ারির মিছিলে পুলিশ পুনরায় গুলিবর্ষণ করে এবং কমপক্ষে ২ জন মৃত্যুবরণ করে। ২১ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি চারদিন ঢাকা বেতার কেন্দ্র পূর্ণ হরতাল পালন করে। এ সময় শুধুমাত্র সংবাদ বুলেটিন ছাড়া অন্য কোনো অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় নি।

মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতির মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে মোতাবেক ড. সাঈদ হায়দার নকশা পরিকল্পনা করেন এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে অজ্ঞাতনামা দুই রাজমিস্ত্রি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। তাদেরকে সাহায্য করেন দলমত নির্বিশেষে সকল ছাত্র। শহীদ শফিউর রহমানের পিতা ২৪ তারিখে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করেন ‘আজাদ’ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন। কিন্তু ঐদিনই বিকেলে পুলিশ দিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল মুসলিম লীগ সরকার শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলে।

এরপর পরবর্তী দুই বৎসর ভাষার প্রশ্নে তেমন কোনো অগ্রগতি হয় নি। চুয়ান্ন সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে। মুসলিম লীগের ভরাডুবি ঘটে। পরাজিত মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দ বাংলাভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে এবং সে অনুসারে মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি বোর্ডের মিটিংয়ে বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য সুপারিশ করা হয়। এই সুপারিশের আলোকে ৯ মে ১৯৫৪ তারিখে পাকিস্তান গণপরিষদে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হবে উর্দু ও বাংলা। গণপরিষদের এই সিদ্ধান্তে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভ করে ।

[উপরোক্ত সকল তথ্য উইকিপিডিয়া, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বই থেকে এবং সরকারি ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তথ্য জনিত কোন ভুল যদি পেয়ে থাকেন তবে অবশ্যই আমাদেরকে জানাতে ভুলবেন না।]

Previous Post Next Post

এই লেখাটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ওয়ালে শেয়ার করুন 😇 হয়তো এমনও হতে পারে আপনার শেয়ার করা এই লেখাটির মাধ্যমে অন্য কেউ উপকৃত হচ্ছে! এবং কারো উপকার করার থেকে ভাল আর কি হতে পারে?🥺