দ্বিজাতি তত্ত্ব কি ব্যাখ্যা করো

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্ব বা Two Nation Theory of Jinnah আমাদের এই উপমহাদেশের ইতিহাসের একটি অন্যতম অধ্যায়। বিভিন্ন পরীক্ষায় দ্বিজাতি তত্ত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে এবং এ সম্পর্কে অল্প কিছু ধারণা রাখলে আপনি দ্বিজাতি তত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে পারবেন এবং কি জন্য দ্বিজাতিতত্ত্ব উপস্থাপন করা হয়েছিল সে সম্পর্কে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন।

দ্বিজাতি তত্ত্ব

দ্বিজাতি শব্দের অর্থ দুটি জাতি। হিন্দু এবং মুসলমান কে ভারতীয় উপমহাদেশে দুটি ভাগে বিভক্ত করার জন্য একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় এবং এর মূল কারণ ছিল তৎকালীন সময়ে হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে বেশকিছু সংঘাত এবং অসমতা। এর প্রেক্ষিতে মূলত হিন্দু এবং মুসলমানকে দুটি আলাদা জাতিতে তথা রাষ্ট্রে বিভক্ত করার জন্য দ্বিজাতি তত্ত্ব উপস্থাপন করা হয় ১৯৪০ সালের মার্চ মাসে পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের প্রথমদিন। এবং এই তত্ত্বটি উপস্থাপনের পিছনে মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।

অনেকে মনে করেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে লাহোর প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল এবং মুসলিম জাতীয়তাবাদ পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করেছিল। ১৯৪০ সালের মার্চ মাসে পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের প্রথমদিন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বিখ্যাত দ্বি-জাতি তত্ত্বের ঘোষণা দেন। উক্ত ঘোষণায় তিনি বলেন, ভারতের সমস্যা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে নয়, দুই জাতির মধ্যে। এর মাধ্যমে মূলত ভারতে মুসলমান এবং হিন্দুদের মধ্যে জাতিগত পার্থক্য এবং অসমতা দেখা দিয়েছিল তার সম্পর্কে বলা হয়।

দ্বিজাতি তত্ত্ব কি

সে সময় হিন্দু এবং মুসলিম দের মধ্যে এতটা পার্থক্য তৈরী হয়েছিল যে আলি জিন্না মনে করেছিলেন তাদেরকে একত্রে রাখা সম্ভব নয়। তাদের আলাদা আলাদা জাতি হিসেবে আলাদা আলাদা স্থানে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে এবং কোনভাবেই তাদেরকে একত্রিত করা যাবে না, এটি তিনি মনে করেছিলেন। যেহেতু তারা দুটি স্বতন্ত্র এবং পৃথক জাতি, তাই তাদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র তৈরি করে দেয়াই সমাধান মনে করেন।

তিনি দ্বি-জাতি তত্ত্বের ব্যাখ্যা করেন এভাবে,

“হিন্দু-মুসলমানদের ধর্ম আলাদা, দর্শন আলাদা, সামাজিক রীতিনীতি আলাদা, সাহিত্য আলাদা, তাদের পরস্পর বিবাহের রীতি নেই, একসঙ্গে যাওয়ার রীতি নেই। বস্তুত এদের আছে দু'টি আলাদা সভ্যতা, যা দাঁড়িয়ে আছে পরস্পর বিরোধী ধ্যান-ধারণার ওপর। তাদের জীবনদর্শন এবং জীবনবোধ আলাদা। তারা ইতিহাসের ভিন্ন ভিন্ন অংশ যতে নিজেনের প্রেরণা সংগ্রহ করে। কানের মহাকাব্য পৃথক; ইতিহাস ভিন্ন, তারা পৃথক নায়কের গুণমুগ্ধ। একপক্ষের যিনি নায়ক, অন্যপক্ষের তিনি শব্। একদলের কাছে যা জয়সূচক, অন্যদলের নিকট তা পরাজয়। এরূপ দুটি গোষ্ঠী নিয়ে যদি একটি রাষ্ট্র গঠন করা হয় যার একটি সংখ্যাগুরু এবং অন্যটি সংখ্যালঘু, তাহলে অসন্তোষ বাড়ৰেই এবং শেষ পর্যন্ত সে রাষ্ট্রের সংবিধান ভেঙে পড়বেই"

১৯৩৯ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হিন্দু মহাজন সভার অধিবেশনে সভাপতি সাভারকার ঘোষণা করেন, “ভারতবর্ষকে আজ আর এক অবিভাজ্য ও সুসংহত জাতি মনে করা যায় না"। তিনি আরো বলেন যে, “এদেশে প্রধানত দু'টি জাতি-হিন্দু ও মুসলমান"।

হিন্দু মহাসভার এ বক্তব্য মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে তাঁর বিখ্যাত দ্বি-জাতি তত্ত্ব ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ করে। তিনি ঘোষণা করেন, "The Mussalmans are a nation according to any definition and they must have their homeland, their territory and their state," বস্তুত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্ব লাহ্যের প্রস্তাবের দার্শনিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছিল।

আরো পড়ুন: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সাজেশন (PDF Download)

লাহোর অধিবেশনে জিল্লাহ মুসলমানদের পৃথত জাতি হিসেবে চিহ্নিত করেন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর এরূপ ব্যাখ্যার ভিত্তিতে বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ মুসলিম লীগের অধিবেশনে মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমি স্থাপনের রূপরেখা সম্বলিত একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নির্দেশে চৌধুরী বালেকুজ্জামান উক্ত প্রস্তাব সমর্থন করেন। ইতিহাসের পাতায় আমরা বর্তমানে লাহোর প্রস্তাব নামের যে অধ্যায় কে জানি তা মূলত এই পুরো ঘটনার উপরে ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। ধর্মের ভিত্তিতে দুটি জাতি বা রাষ্ট্র তৈরির এই বিষয়টি হচ্ছে দ্বিজাতি তত্ত্ব।

তথ্যসূত্র: 

-স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস | হাবিবুর, জাহাঙ্গীর, বাতেন চৌধুরি, সুলতান কবীর -বঙ্গ প্রকাশনা।

-উইকিপিডিয়া

ইতিহাস সম্পর্কিত কোনো অসঙ্গতি লক্ষ করলে অবশ্যই আমাদেরকে জানাতে ভুলবেন না।

Previous Post Next Post

এই লেখাটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ওয়ালে শেয়ার করুন 😇 হয়তো এমনও হতে পারে আপনার শেয়ার করা এই লেখাটির মাধ্যমে অন্য কেউ উপকৃত হচ্ছে! এবং কারো উপকার করার থেকে ভাল আর কি হতে পারে?🥺