ষষ্ঠ শ্রেণি বিজ্ঞান: তৃতীয় অধ্যায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর কোষীয় সংগঠন (গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর)

১. জীব কোষ কাকে বলে?

জীবদেহের গঠন ও কাজের একককে কোষ বলে।

২. এককোষী জীব কাকে বলে?

যেসকল জীবের জীবদেহ একটি মাত্র কোষ দ্বারা গঠিত হয়, তাদেরকে এককোষী জীব বলা হয়। যেমন: কাউলের্পা, এক প্রকার অ্যামিবা ইত্যাদি।

ষষ্ঠ শ্রেণি বিজ্ঞান: তৃতীয় অধ্যায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর কোষীয় সংগঠন (গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর PDF Download)

৩. বহুকোষী জীব কাকে বলে?

যেসকল জীবের জীবদেহ একাধিক কোষ দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে, তাদেরকে বহুকোষী জীব বলা হয়। যেমন: মানুষ, বাঘ, সিংহ ইত্যাদি।

৪. আদি কোষ কাকে বলে?

যে কোষে কোনো সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না অর্থাৎ যে কোষের নিউক্লিয়াস কোনো আবরণী দ্বারা আবদ্ধ নয় তাকে আদি কোষ বলে। যেমন: ব্যাকটেরিয়া।

৫. প্রকৃত কোষ কাকে বলে?

যে কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে অর্থাৎ যে কোষের নিউক্লিয়াস আবরণী দ্বারা আবদ্ধ থাকে তাকে প্রকৃত কোষ বলে।

৬. আদি কোষ ও প্রকৃত কোষের মধ্যে পার্থক্য লিখ।

আদি কোষ ও প্রকৃত কোষের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ।

পার্থক্যের বিষয় আদি কোষ প্রকৃত কোষ
সুগঠিত নিউক্লিয়াস
সুগঠিত নিউক্লিয়াস নেই।
সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে।
আবরণীবেষ্টিত অঙ্গাণু
আবরণীবেষ্টিত অঙ্গাণুর উপস্থিতি থাকে না।আবরণীবেষ্টিত অঙ্গাণুর উপস্থিতি থাকে।
কোষ প্রাচীরের উপাদান
কোষ প্রাচীরের উপাদান পেপটিডোগ্লাইকেন।
উদ্ভিদের ক্ষেত্রে কোষ প্রাচীরের উপাদান সেলুলোজ।
কোষ বিভাজনের ধরন
অ্যামাইটোসিস
দেহকোষে মাইটোসিস এবং জননকোষে মিয়োসিস।

৭. একটি আদর্শ জীবকোষের গঠন ব্যাখ্যা কর।

একটি আদর্শ জীবকোষের ক্ষেত্রে কোষপ্রাচীর (উদ্ভিদকোষে) এবং প্রোটোপ্লাজম থাকে। প্রোটোপ্লাজমে আবার কোষ ঝিল্লি, নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম থাকে। সাইটোপ্লাজমে আবার পাওয়া যায় প্লাস্টিড, কোষ গহ্বর এবং মাইটোকন্ড্রিয়া।

(বইতে থাকা প্রত্যেকটি অঙ্গানুর ব্যাখ্যা থেকে কিছুটা লিখে দিলেই হয়ে যাবে। সম্ভব হলে চিহ্নিত চিত্রও আঁকা যেতে পারে।)

৮. প্রোটোপ্লাজম বলতে কী বুঝ?

কোষপ্রাচীরের অভ্যন্তরে থাকা পাতলা পর্দাবেষ্টিত জেলীর মতো থকথকে এবং আধা তরল বস্তুকে প্রোটোপ্লাজম বলা হয়।

৯. কোষপ্রাচীর বলতে কী বুঝ? ব্যাখ্যা কর।

কোষপ্রাচীর উদ্ভিদকোষের অনন্য বৈশিষ্ট্য। প্রাণীকোষে কোষপ্রাচীর পাওয়া যায় না। কোষপ্রাচীর জড় পদার্থের তৈরি এবং এতে কখনো কখনো ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্রগুলোকে কূপ বলে। কোষপ্রাচীর কোষের আকার প্রদান করে এবং কোষের ভেতর ও বাহিরের মধ্যে তরল পদার্থের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। এরা ভেতরের অংশকে রক্ষা করে।

১০. প্লাস্টিড সম্পর্কে লিখ।

উদ্ভিদকোষের সাইটোপ্লাজমের একটি অংশ প্লাস্টিড বা বর্ণাধার। প্লাস্টিডের কারণেই উদ্ভিদের পাতা, ফুল বা ফলের বিভিন্ন রঙ হয়ে থাকে। সবুজ রঙের প্লাস্টিড উদ্ভিদকে খাদ্য তৈরিতে সহায়তা করে যে খাদ্য়ের উপর প্রাণীকূলও নির্ভরশীল। অন্যান্য রঙের প্লাস্টিডগুলো উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গকে রঙিন করে আকর্ষণীয় করে তোলে। বর্ণহীন যেসব প্লাস্টিড থাকে তারা খাদ্য সঞ্চয় করে।

১১. কোষের শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র কোনটি? ব্যাখ্যা কর।

বা, মাইটোকন্ড্রিয়াকে কেন কোষের শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র বা শক্তির আধার বলা হয়?

শক্তি উৎপাদনের প্রায় সকল বিক্রিয়া মাইটোকন্ড্রিয়ার অভ্যন্তরে ঘটে থাকে বলে মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র বলা হয়। এরা শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন করে থাকে।

১২. নিউক্লিয়াস কাকে বলে?

জীবকোষের প্রোটোপ্লাজমের মধ্যে ভাসমান গোলাকার ঘন বস্তুটিকে নিউক্লিয়াস বলে। 

১৩. নিউক্লিয়াসের গঠন ব্যাখ্যা কর।

একটি নিউক্লিয়াস মূলত ৪টি অংশ নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে। এই অংশ চারটি হলো:

  • নিউক্লিয়ার মেমব্রেন
  • নিউক্লিওপ্লাজম
  • ক্রোমাটিন তন্তু
  • নিউক্লিওলাস

নিউক্লিয়ার মেমব্রেন

নিউক্লিয়ার মেমব্রেন নিউক্লিয়াসকে ঘিরে রাখে। এই আবরণী সাইটোপ্লাজম থেকে নিউক্লিয়াসের ভেতরের বস্তুসমূহকে আলাদা করে রাখে। একই সাথে এটি তরল পদার্থেরও চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।

নিউক্লিওপ্লাজম

নিউক্লিয়াসের ভেতরের তরল ও স্বচ্ছ পদার্থটিই নিউক্লিউওপ্লাজম। নিউক্লিওপ্লাজমের মধ্যেই বাকি দুটি অর্থাৎ ক্রোমাটিন তন্তু এবং নিউক্লিওলাস থাকে।

ক্রোমাটিন তন্তু

নিউক্লিয়াসের ভেতরে সুতার মতো কুণ্ডলী পাকানো বা খোলা অবস্থায় থাকা অবস্থায় যে অঙ্গানুটি রয়েছে, তাকেই ক্রোমাটিন তন্তু বলে। এটি জীবের বৈশিষ্ট্য বহন করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দেয়।

নিউক্লিওলাস

নিউক্লিয়াসের ভেতরে ক্রোমাটিন তন্তুর সাথে লেগে থাকা বিন্দুর ন্যায় অতিক্ষুদ্র যে অঙ্গানুটি দেখা যায় সেটিই নিউক্লিওলাস।

১৪. ক্রোমাটিন তন্তু কী?

নিউক্লিয়াসের ভেতরে সুতার মতো কুণ্ডলী পাকানো বা খোলা অবস্থায় থাকা অবস্থায় যে অঙ্গানুটি রয়েছে, তাকেই ক্রোমাটিন তন্তু বলে।

১৫. জীবদেহে কোষের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।

জীবদেহে কোষ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যাদি সম্পন্ন করে থাকে। সেসকল কাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হলো বিভিন্ন ধরনের কলা গঠন, বিভিন্ন অঙ্গ গঠন, জীবের দেহ গঠন, শক্তি উৎপাদন, খাদ্য ও পানি সঞ্চয় এবং প্রয়োজনীয় উৎসেচক ও রস নিঃসরন। নিচে সংক্ষেপে এসব সম্পর্কে বলা হলো:

বিভিন্ন ধরনের কলা গঠন

অনেকগুলো কোষ সম্মিলিতভাবে একটি কলা ও কলাতন্ত্র গঠন করে। একশেত্রে কলায় অবস্থিত সকল কোষ এক ধরনের কাজ করে।

বিভিন্ন অঙ্গ গঠন

বিভিন্ন ধরনের কোষ ও কলা মিলিত হয়ে জীবদেহের অঙ্গপ্রতঙ্গ গঠিন করে। যেমন: মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল, হাত, পা ইত্যাদি।

জীবের দেহ গঠন

জীবের দেহ গঠন কোষের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।

খাদ্য উৎপাদন

সবুজ উদ্ভিদ খাদ্য উৎপাদন করতে পারে। সবুজ উদ্ভিদের কোষে ক্লোরোপাস্ট নামক প্লাস্টিড থাকে। এই ক্লোরোপাস্ট সূর্যালোকের উপস্থিতিতে পানি ও কার্বন ডাই অক্সাইডের সমন্বয়ে শর্করা জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে থাকে।

শক্তি উৎপাদন

জীবের জীবন ধারণের জন্য যে শক্তির প্রয়োজন হয় তাও কোষের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।

খাদ্য ও পানি সঞ্চয়

কিছু কিছু উদ্ভিদের কোষ পানি সঞ্চয় করে রাখে। আবার কোনো কোনো কোষ খাদ্য মজুদ করে। যেমন আলু।

উৎসেচক এবং রস নিঃসরণ

প্রাণীদেহে একধরনের কোষ দেখা যায় রারা এই কাজ করে থাকে। যেমন: পিত্তরস, ইনসুলিন।

১৬. ক্রোমাটিন তন্তুর দুটি কাজ লেখ।

ক্রোমাটিন তন্তুর দুটি কাজ নিম্নরূপ:

  • কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
  • জীবের বৈশিষ্ট্য বহন করে পরবর্তী প্রজন্মে নিয়ে যায়।

১৭. কোষ ঝিল্লি কী?

সম্পূর্ণ প্রোটোপ্লাজমকে ঘিরে যে নরম পর্দা দেখা যায় তাকেই কোষঝিল্লি বা সেল মেমব্রেন বলে।

১৮. প্লাস্টিডের কাজগুলো উল্লেখ কর।

প্লাস্টিডের কাজসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

  • সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের খাদ্য তৈরি।
  • উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সঞ্চয়ে সাহায্য করা।
  • ফুল, পাতা ও ফলকে রঙিন করে কীটপতঙ্গকে আকৃষ্ট করে পরাগায়ন ঘটাতে সাহায্য করা।

১৯. কোন কোন অঙ্গানু উদ্ভিদ কোষে পাওয়া যায়, কিন্তু প্রাণী কোষে পাওয়া যায় না?

উদ্ভিদকোষে পাওয়া যায় কিন্তু প্রাণী কোষে পাওয়া যায় না এমন কিছু অঙ্গানু হলো: 
  • কোষপ্রাচীর
  • প্লাস্টিড 

২০. কোন কোন অঙ্গানু প্রাণী কোষে পাওয়া যায়, কিন্তু উদ্ভিদ কোষে পাওয়া যায় না?

প্রাণী কোষে পাওয়া যায়, কিন্তু উদ্ভিদ কোষে পাওয়া যায় না এমন অঙ্গানুর নাম সেন্ট্রিওল।

২১. নিউক্লিয়াসের কাজ কী কী?

নিউক্লিয়াসের কিছু কাজ নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • বিপাকীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ
  • বংশগত বৈশিষ্ট্যের তথ্যের নিয়ন্ত্রণ
  • কোষ বিভাজন
  • বংশগত বৈশিষ্ট্যের সঞ্চারণ
  • প্রকরণ বা ভেদ সৃষ্টি

২২. মাইট্রোকন্ড্রিয়ার বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।

মাইটোকন্ড্রিয়া কোষের সাইটোপ্লাজমে থাকা একটি অঙ্গানু যা কোষের শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র নামে পরিচিত। এটি দন্ডাকার, বৃত্তকার বা তারকাকার হতে পারে। এরা দুই স্তর বিশিষ্ট ঝিল্লি দিয়ে আবৃত্ত থাকে। বাইরের স্তর মসৃণ কিন্তু ভেতরেরটি ভাঁজযুক্ত। মাইটোকোন্ড্রিয়ার প্রধান কাজ শ্বস্ন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে শক্তি উৎপাদন করা। 

২৩. জননকোষ কাকে বলে?

যে কোষ জীবের প্রজননে অংশ নেয় তাকে জননকোষ বলে।

২৪. দেহকোষ কাকে বলে?

যে কোষ জীবের দেহগঠনে অংশ নেয় তাকে দেহকোষ বলা হয়।

২৫. দেহকোষ ও জননকোষের মধ্যে পার্থক্য লিখ।

দেহকোষ ও জননকোষের মূল পার্থক্য তাদের কাজে। দেহকোষ দেহ গঠন করে থাকে এবং জননকোষ প্রজননে অংশ নেয়। দেহকোষের বিভাজনের মাধ্যমে জীবদেহের বৃদ্ধি ঘটে।

২৬. জীবদেহের বৃদ্ধির কারণ কী?

দেহকোষের বিভাজনই জীবদেহের বৃদ্ধির কারণ।

২৭. প্লাস্টিডকে বর্ণাধার বলা হয় কেন?

প্লাস্টিডকে বর্ণাধার বলা হয় কারণ প্লাস্টিডই উদ্ভিদের পাতা, ফুল, ফলকে রঙিন বা বর্ণীল করে তোলে।

২৮. প্রোটোপ্লাজমকে জীবনের ভিত্তি বলা হয় কেন?

প্রোটোপ্লাজমের বহুবিধ পরিবর্তনের ফলেই জীবনের বৈশিষ্ট্যাবলি দেখা যায়। একারণেই প্রোটোপ্লাজমকে জীবনের ভিত্তি বলা হয়।

২৯. প্রকৃত কোষ কত প্রকার?

কাজের ভিত্তিতে প্রকৃত কোষ দুই প্রকার। যথা:
  1. দেহ কোষ
  2. জনন কোষ

৩০. কোষপ্রাচীরকে উদ্ভিদকোষের অনন্য বৈশিষ্ট্য বলা হয় কেন?

কোষপ্রাচীরকে উদ্ভিদকোষের অনন্য বৈশিষ্ট্য বলা হয় কারণ এটি শুধু উদ্ভিদকোষেই পাওয়া যায়। প্রাণী কোষে এটি পাওয়া যায় না।

৩১. কে কোষ আবিষ্কার করেন?

ইংরেজ বিজ্ঞানী রবার্ট হুক ১৬৬৫ সালে সর্বপ্রথম কোষ আবিষ্কার করেন।

আরও দেখুন:
Md. Rabiul Mollah

Okay! So here I'm Md. Rabiul Mollah from Pathgriho Network. I'm currently a student of B.Sc in Textile Engineering Management at Bangladesh University of Textiles. facebook instagram github twitter linkedin

Previous Post Next Post

এই লেখাটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ওয়ালে শেয়ার করুন 😇 হয়তো এমনও হতে পারে আপনার শেয়ার করা এই লেখাটির মাধ্যমে অন্য কেউ উপকৃত হচ্ছে! এবং কারো উপকার করার থেকে ভাল আর কি হতে পারে?🥺