ক্রিকেটকে বিদায় বলে আবার ফিরেছিলেন যারা

অবসর ভেঙে ফিরে আসা ক্রিকেটারদের নাম

অবসর! চার অক্ষর বিশিষ্ট এই শব্দটি শুধু মাত্র একটি শব্দ নয়৷ এটি কারোর জন্যে অতি গৌরবের, সম্মানের। কারোর জন্যে দুঃখের, মনোবেদনার। কেউ কেউ এই শব্দের সদ্ব্যবহারে বনে গেছেন ইতিহাসের অংশ। আবার কেউ কেউ এই শব্দের অপব্যবহার করায় হয়ে গেছেন হাসির পাত্র। ক্রিকেটের জন্মলগ্ন থেকে ক্রিকেট দুনিয়ায় প্রতি বছর বহু ক্রিকেটারের আবির্ভাব হয়েছে, একদিন সময় শেষ হয়ে আসে বিধায় অসংখ্য অসংখ্য ক্রিকেটার নিজেকে খেলা থেকে অবসর ঘোষণা দিয়ে নিজের ক্যারিয়ারকে গত করে দিয়েছেন। অনেকেই গত করে দেয়া ক্রিকেটকে ভালোবেসে আবারো ফিরে এসেছেন মাঠের দিকে। চলুন দেখে আসি এমন কয়েকজন ক্রিকেটারকে। যারা অবসরপ্রাপ্ত হওয়ার পরেও মাঠে ফিরে এসেছিলেন, মাঠের টানে, ক্রিকেটের টানে। এমনই কয়েকজন ক্রিকেটারদের নিয়ে লিখেছেন "মুহাম্মাদ আব্দুল জলিল রাবেল"।

ক্রিকেটকে বিদায় বলে আবার ফিরেছিলেন যার

১. বব সিম্পসন

৫২ টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করা সাবেক এই অজি অধিনায়ক ১৯৬৮ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন এবং এর ৯ বছর পর ১৯৭৭ সালে পূণরায় ক্রিকেটে ফিরে আসেন। সম্ভবত ক্রিকেটে অবসর নিয়ে পূণরায় মাঠে ফেরা ব্যাক্তিদের মধ্যে তিনিই প্রথম কোন ব্যাক্তি। অবশ্য এর পিছনে একটা নির্দিষ্ট কারণ আছে। তার অবসরের পর ৭০ এর দশকে "ক্যারি প্যাকার ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট" এ অজিদের ভরাডুবি দেখে অবশেষে তিনি নিজেই দলকে এগিয়ে নিতে পূনরায় দলে ফেরেন। নিজের জীবন যাত্রার ৪২ বছরে এসে তিনি ভারতের বিপক্ষে একটি সিরিজে অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে অধিনায়কত্ব করতে হয়েছে। সেই সিরিজে অস্ট্রেলিয়া দল ভারতকে ৩-২ ব্যবধানে জিতে সিরিজ জয় করে। সিরিজে সিম্পসন ৫৩.৯০ গড়ে ৫৩৯ রানের পাশাপাশি বোলিংয়ে ৪ উইকেট এবং ফিল্ডিংয়ে ৬টি ক্যাচের এক অতিমানবীয় পারফরম্যান্স করেন, এবং প্রমাণ করেন তিনি ফিরে আসাটা কোন ভুল সিদ্ধান্ত ছিলনা। 


২. ইমরান খান 

১৯৭১ সালে ক্রিকেট দুনিয়ায় অভিষেক হওয়া এই পাকিস্তানি বোলারও আছেন এই লিস্টে। তর্কসাপেক্ষে পাকিস্তানের অন্যতম সেরা এই অধিনায়ক ১৯৮৭ বিশ্বকাপে পর নিজেকে ক্রিকেট থেকে সরিয়ে নিলে পরবর্তীতে তৎকালীন পাকিস্তানি রাষ্ট্রপতি জিয়া-উল-হকের জোরাজোরিতে দলে ফেরানো হয়, এবং পরবর্তীতে ১৯৯২ বিশ্বকাপে সেই ইমরান খানের শৈলী অধিনায়কত্বের নেতৃত্বের বিনিময়ে পাকিস্তান বিশ্বকাপে জিতার সম্মান অর্জন করে। 


৩. জাবেদ মিয়াদাদ

অবসরের মাত্র দশ দিন পর আবারো ফেরার ঘোষণা দেয়া একমাত্র ব্যাটসম্যান। ইমরান খান যদি পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা ক্যাপ্টেন হোন, তাহলে জাবেদ মিয়াদাদ হচ্ছেন পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান। জাবেদ মিয়াদাদ যখন হঠাৎ অবসরে যান, তখন তৎকালীন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বেনাজির বুট্টো এর "১৯৯৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাওয়ার" পরামর্শ দিলে তিনি আবারো দলে ফেরেন। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে তার পারফরম্যান্স ছিল৷ ৩ ম্যাচে মাত্র ৫৪ রান, সাথে বুট্টো সাহেবের সেই পরামর্শ এর মান ঠিকভাবে রাখতে ব্যর্থ হোন। এবং এরপরই তিনি ক্রিকেটকে চিরদিনের জন্যে বিদায় বলে দেন৷ বিদায়কালে তার বয়স ছিল ৩৯ বছর। 


৪. ব্রেন্ডন টেইলর

তিনি জিম্বাবুয়েইন ক্রিকেটের প্রথম ব্যাক্তি যিনি ওয়ানডে ক্রিকেটে পর পর তিন ম্যাচে শতক হাঁকিয়ে হ্যাট্রিক সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন, ২০১৫ বিশ্বকাপে দলের ডুবন্ত তরী নিয়ে তার নেতৃত্বে বাছাই পর্ব উতরাতে পেরেছিল টিম জিম্বাবুয়ে। পরবর্তীতে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট ছেড়ে তিনি নটিংহামশায়ার দলে কাউন্টি লীগে ২ বছরের চুক্তিতে যোগ দেন। ২০১৭ সালে চুক্তির মেয়াদ যখন শেষ হয়ে যায়, তখন তিনি আবার জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে ফেরেন, এবং ৩৩ বছর বয়সে জিম্বাবুয়ের ইতিহাসের সর্বোচ্চ শতক করা ব্যাটসম্যানের গৌরব অর্জন করেন। 


৫. কার্ল হোপার 

১৯৯৯ এর ওয়ানডে বিশ্বকাপের তখন দরজায় কড়া নাড়ছে, মোটামুটি সব দলের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি তখন চূড়ান্ত সময়ে, ঠিক সেই জায়গায় এসে মাত্র ৩ সপ্তাহ আগে আচমকাই অবসরের ঘোষণা দিয়ে দেন কার্ল হোপার। বিশ্বকাপের এই অন্তিম মূহুর্তে ক্যারিয়ারে ২০৬ ইনিংসে ৫৮৬১ রান করা এই কার্ল হোপারকে ফিরিয়ে নিতে ক্যারিবীয় বোর্ড তখন ব্যর্থ চেষ্টা চালালেও ২০০১ সালে সেই তিনিই পূণরায় ক্রিকেটে ফিরে আসেন। পরবর্তী সময়ে খেলা চালিয়ে গেলেও তার নেতৃত্বে ২০০৩ এর ওয়ানডে বিশ্বকাপে খুব একটা ভালো করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ফলে বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে তার জায়গায় একজন ইয়াংস্টার খেলার যোগ্য মনে করে স্বইচ্ছায় আবারো ক্রিকেটকে চির বিদায় বলে দেন এই অলরাউন্ডার। 


৬. গ্র‍্যান্ট ফ্লাওয়ার

গ্র‍্যান্ট ছিলেন একজন জিম্বাবুয়েইন গ্রেট ব্যাটসম্যান। ২০০৪ সালে তারই সতীর্থ হিথ স্ট্রিককে যখন একজন শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটারের অপবাদ দিয়ে তাকে ক্যাপ্টেন্সি থেকে বরখাস্ত করে দেয়া হল, তখন বিষয়টিকে মেনে নিতে না পেরে তার প্রতিবাদে তিনি সহ মোট ১৩ জন ক্রিকেটার আর খেলা চালিয়ে নিবেন না বলে হুমকি প্রদান করেন। তারপরও বোর্ডের থেকে কোন আশানুরূপ প্রতিত্তোরে না পাওয়ায় তারা সবাই অবসরের ঘোষণা দিতে দেন। অতঃপর প্রায় ৬ বছর পর ২০১০ সালে পূণরায় ক্রিকেটে ফিরলে তার সতীর্থ ক্রিকেটার অ্যালিস্টেয়ার ক্যাম্পবেল চেয়েছিলেন তিনি ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলা চালিয়ে নিতে, কিন্তু গ্র‍্যান্ট ফ্লাওয়ার তার খারাপ ফর্মের জন্যে আগেই নিজেকে ক্রিকেট থেকে একেবারেই সরিয়ে নিয়েছিলেন। 


৭. স্টিভ টিকালো

বয়সের ভারে নুইয়ে পরা কেনিয়ান এই লিজেন্ড তার প্রথম অবসরটা নিয়েছিলেন ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ঠিক পরেই। কিন্তু ২০১৩ সালে সেই তার বোর্ডের অনুরোধে আবারো ক্রিকেটে ফিরে এসেছিলেন তিনি, ফেরাকালে তার বয়স ছিল ৪২ বছর। ক্রিকেটে ফেরার পর কেনিয়া ক্রিকেট বোর্ড তাকে কেনিয়া দলের ওয়ানডে ক্রিকেট ও টি-টোয়েন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে তাকে ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্ব প্রদান করে। ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের একটি ম্যাচে তিনি তার সোনালী ক্যারিয়ারকে বিদায় বলে দেন।


৮. তামিম ইকবাল

tamim-iqbal-retire

বিস্তারিত জানানো অপ্রয়োজনীয়।


কেভিন পিটারসন এবং আম্বাতি রাইডু-ও আছে এই তালিকায়। আর সবথেকে বেশিবার আছে পাকিস্তানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার শহিদ আফ্রিদি

আফ্রিদির অবসর গ্রহন ও ফিরে আসার যাত্রার শুরুটা হয় ২০০৬ সালে। টেস্ট ক্রিকেটে সাময়িক অবসরের ঘোষণা থেকে ফিরে আসেন ২০১০ সালে, এবং এসেই অধিনায়কের দায়িত্ব পান আফ্রিদি।

ফিরে এসে মাত্র ১ টেস্ট খেলেই স্থায়ীভাবে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। ২০১১ এর বিশ্বকাপের পর অবসর গ্রহন এবং একই বছর ফিরে আসার রেকর্ডও তাঁর নামের পাশেই। 

লিখেছেন

  • মোহাম্মাদ আব্দুল জলিল রাবেল
  • লেখক, ক্রিকেটখোর

ফটো ক্রেডিট

  • ESPNCricinfo
  • Getty Images
  • ICC

Md. Rabiul Mollah

Okay! So here I'm Md. Rabiul Mollah from Pathgriho Network. I'm currently a student of B.Sc in Textile Engineering Management at Bangladesh University of Textiles. facebook instagram github twitter linkedin

Previous Post Next Post

এই লেখাটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ওয়ালে শেয়ার করুন 😇 হয়তো এমনও হতে পারে আপনার শেয়ার করা এই লেখাটির মাধ্যমে অন্য কেউ উপকৃত হচ্ছে! এবং কারো উপকার করার থেকে ভাল আর কি হতে পারে?🥺